হিট স্ট্রোকের প্রতিকার ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আপনারা কি হিট স্ট্রোকের প্রতিকার ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। হিট স্ট্রোক এর কারনে মানুষ এর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হিট স্ট্রোকের কারন গুলো সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানা উচিত।
হিট স্ট্রোক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের লেখা এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন। আশা করি আপনি লাভবান হবেন।
ভূমিকাঃ
হিট স্ট্রোক সাধারণ মনে হলেও আসলে কিন্তু এমনটা না। হিট স্ট্রোক অনেক এর জীবন কেড়ে নিতে পারে। হিট স্ট্রোক গ্রীষ্মকালে সব চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। কারণ এই সময় রোদের তাপমাত্রা অধিক মাত্রায় বেড়ে যায়। রোদের তীব্র তাপের কারনে মানুষ এর শরীর এর তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। বয়স্ক মানুষের মধ্যে যারা ক্লাসিক হিট স্ট্রোক এর আসংখায় থাকে তাদের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর আসংখা ৫০% হয়ে থাকে।
হিট স্ট্রোকের কারণ গুলো যাই থাকুক,আমরা যদি হিট স্ট্রোক এর প্রতিরোধ এর নিয়ম গুলো মেনে চলি তাহলে হিট স্ট্রোক হতে নিজেদের কে বাঁচাতে পারবো। হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কে প্রচুর পানি খেতে হবে। কারণ গরমের সময় আমাদের শরীর হতে সব পানি বের হয়ে যায় এবং আমাদের শরীর পানিশূন্যতা হয়ে যায়।
হিট স্ট্রোক কি?
হিট স্ট্রোক এমন একটি রোগ যেটিকে আবার সান স্টোকো বলা হয়। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা যখন ৪০.০ °C বেশি হয় তখন মানুষের হিট স্ট্রোক হয়ে। হিট স্ট্রোক গরম কালে হয়ে থাকে। কারণ গরম কালে সূর্যের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তাই সূর্যের অতিরিক্ত তাপে মানুষের শরীরের তাপমত্রা বেড়ে গেলে মানুষ হিট স্ট্রোক করে।
হিট স্ট্রোক এর কারনে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হিট স্ট্রোক এর সময় মানুষের ফেস লাল হয়ে যায়। তাছাড়াও মাথা ব্যথা থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ঘাম ও ফেস বিভ্রান্তি দেখা যায়। গরম কালে অনেক মানুষ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। হিট স্ট্রোকের কারণ অনেক রয়েছে।
হিট স্ট্রোকের কারণঃ
হিট স্ট্রোক মূলত অত্যধিক বাহ্যিক তাপমাত্রা ও অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম এর কারনে হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন ওষুধ এর প্রতিক্রিয়ার কারনে হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে। তাছাড়াও হার্ট এর কিংবা স্কিন এর রোগ থেকেও হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মানুষ থাকলে মানুষ এর শরীর এর তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায়। এই কারনে বাহিরে থাকা অবস্থায় মানুষ বেশি হিট স্ট্রোক করে। হিট স্ট্রোকের সময় মানুষ এর মাথা ব্যথা থেকে শুরু করে, শরীর দুর্বলতা, হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া, বমি হওয়া ইত্যাদি আরও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হিট স্ট্রোকের এর লক্ষণঃ
হিট স্ট্রোকের কারণ বলতে আমরা অতিরিক্ত তাপমাত্রা কে বেশি প্রাধন্য দিয়ে থাকি। এখন আমরা জানবো হিট স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো কি কি-
- প্রচন্ড মাথাব্যথাঃ হিট স্ট্রোকের সময় প্রচন্ড মাথাব্যথা শুরু হয়। এই সময় মাথাব্যথার কারনে মানুষের অনেক কষ্ট হয়ে থাকে। প্রচন্ড মাথাব্যথার কারনে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- হার্টবিট বেড়ে যায়ঃ হিট স্ট্রোক হলে মানুষ এর শরীর এর হার্টবিট বেড়ে যায়। এর কারনে অনেক অস্তিরতা লাগে।
- পিপাসা লাগাঃ হিট স্ট্রোক হলে মানুষ এর প্রচুর পানি পিপাসা লাগে। অতিরিক্ত গরমে মানুষ এর গলা শুকিয়ে যায়।
- বমি বমি হওয়াঃ হিট স্ট্রোকের লক্ষণ গুলোর মধ্যে বমি বমি ভাব হওয়াটা বা বমি করাকেও ধরা হয়।
- গাড় প্রসাবঃ হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রসাব এর রঙ গাড় হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় প্রসাব হলুদ হয়ে থাকে।
- দুর্বলতাঃ এই সময় শরীর অনেক দুর্বল থাকে। যেকোনো কাজে প্রচুর অলসতা চলে আসে। দুর্বল এর কারনে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- প্রচুর ঘামঃ হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলোর মধ্যে হিট স্ট্রোকে মানুষ এর প্রচুর ঘাম হয়ে থাকে। তাই এই সময় শরীর থেকে সব পানি বের হয়ে যায়। আবার অনেক সময় মানুষ প্রচুর গরমেও ঘামে না কারণ তার আগেই ঘাম এর মাধ্যমে শরীর এর সকল পানি বের হয়ে যায়।
- বিশৃঙ্খলাঃ হিট স্ট্রোকের সময় মানুষ বিশৃঙ্খলার মত আচরণ করে থাকে।
- কথা জড়িয়ে যাওয়াঃ হিট স্ট্রোকের কারণে মানুষের কথা জড়িয়ে যায়। অর্থাৎ কথার মধ্যে এলোমেলো কথা চলে আসে। সঠিকভাবে কোন কথা বলতে পারে না। ইত্যাদি।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে কি খেতে হয়?
তরল খাবার | ফল ও সবজি |
---|---|
প্রচুর পানি খেতে হবে | কলা, আনারস |
ডাবের পানি | তরমুজ, কমলালেবু |
ফলের রস | ডালিম, জামরুল |
স্যালাইন পানি | শসা, লেটুস |
লেবুর শরবত | টমেটো, আঁখ |
মাঠা | পুদিনা, সবুজ শাকসবজি |
হিট স্ট্রোক এর প্রতিরোধঃ
- গরম পরিবেশে যাওয়া যাবে নাঃ হিট স্ট্রোক এর প্রতিরোধ করতে হলে আমাদেরকে গরম পরিবেশ থেকে দূরে থাকে হবে। কারণ গরম পরিবেশে থাকলে শরীর এর তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং প্রচুর ঘাম হয়। ফলে আমাদের শরীর এ থাকা পানি বেড়িয়ে যায়। এর ফলে হিট স্ট্রোক সহ ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
- পাতলা পোশাক পরিধান করাঃ হিট স্ট্রোকের কারণ গুলো থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কে পাতলা, ধিলে ধালা পোশাক পরিধান করতে হবে। কালো পোশাকে তাপ বেশি শোষণ হয় জন্য গরম কালে আমাদের কে কালো পোশাক পরা হতে দূরে থাকতে হবে।
- ফল ও সবজি খাওয়াঃ হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কে পুষ্টিকর সবজি ও ফল খেতে হবে। বেশি করে সবুজ শাকসবজি, তরমুজ, কলা, শসা ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।
- তামাকজাত থেকে দূরে থাকাঃ তামাক খাওয়া শরীর এর জন্য ব্যপক ক্ষতি। আমাদেরকে কোন সময় তামাক খাওয়া যাবে না। হিট স্ট্রোক থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আমাদের কে তামাক থেকে দূরে থাকতে হবে।
- শরীরচর্চাঃ নিয়মিত নিজের শরীরচর্চা করুন। এর ফলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং হিট স্ট্রোক হতে রক্ষা পাওয়া যাবে।
- রুমে এসি লাগানোঃ রুমে ফেন আমাদের কে গরম থেকে বাঁচাতে পারলেও টা সম্পূর্ণ রুপে পারে না। তাই আমাদের উচিত শীততাপ পরিবেশে থাকা। এই জন্য ঘরে এসি লাগান যেতে পারে।
- বেশি করে পানি খাওয়াঃ হিট স্ট্রোক হতে যদি নিজেদের কে বাঁচাতে চাই তাহলে অবশ্যই বেশি বেশি করে পানি খেতে হবে। স্যালাইন পানি সবচেয়ে উত্তম তবে তাই বলে অতিরিক্ত স্যালাইন পানি খাবেন না।
- বাহিরে ছাতা ব্যবহার করতে হবেঃ অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারনে মূলত বেশি হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে। আমাদের যদি বাহিরে কাজ থাকে তাহলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে। ছাতা ব্যবহার করলে রোদের তাপমাত্রা হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
- বিশ্রাম নিনঃ কোন কাজ দীর্ঘ সময় ধরে করবেন না। কাজের ফাকে ফাকে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে নিন। এতে হিট স্ট্রোক হতে কিছুতা রক্ষা পাওয়া যায়।
- ছায়া পথে চলাচল করুনঃ হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কে ছায়া আছে এমন পথ দিয়ে চলাচল করতে হবে। ইত্যাদি।
আশা করি এতক্ষন হিট স্ট্রোক এর প্রতিরোধ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। আমরা যদি এগুলো নিয়ম মেনে চলি তাহলে হিট স্ট্রোক হতে আমরা অনেকটা রক্ষা পেয়ে থাকবো। হিট স্ট্রোকের কারণ যেগুলো রয়েছে সেগুলো থেকে চেষ্টা করবো দূরে থাকার তাহলে আমরা সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবো।
হিট স্ট্রোক হলে কি হয়ঃ
হিট স্ট্রোক হলে মানুষ এর শরীরে খিচুনি সহ অজ্ঞান এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়াও শরীর দুর্বল থেকে মাথা ব্যথা, বমি করা ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মানুষ এর শরীর যখন ৪০ ডিগ্রির অপরে চলে যায় তখন আসলে এই হিট স্ট্রোকের আশঙ্খা বেড়ে যায়। হিট স্ট্রোকের কারণ বলতে গেলে অতিরিক্ত সূর্যের তাপ, কম পানি খাওয়া, অধিক শারিরিক পরিশ্রম করা এসব কেই ধরা হয়।
লেখকের শেষ কথাঃ
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কে হিট স্ট্রোক এর প্রতিরোধ করার নিয়ম গুলো নিয়মিত পালন করতে হবে। আমরা যদি এই নিয়ম গুলো মেনে চলি তাহলে হিট স্ট্রোক এর আসংখা কমে যাবে। গ্রীষ্মকালে আমাদের কে বেশি সচেতন থাকতে হবে। সবসময় গরম থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।
আমাদের পোষ্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে পাশে থাকবেন। সবশেষে আপনার মূল্যবান মন্তব্য জানাতে পোস্ট এর নিচে কমেন্ট বক্সে জানান।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url