অতিরিক্ত লবণ খেলে ক্ষতি হয়? বিস্তারিত জেনে নিন।
আপনারা কি অতিরিক্ত লবণ খেলে ক্ষতি হয় এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। লবণ বেশি খেলেও ক্ষতি আবার কম খেলেও ক্ষতি তাই আমাদের কে আপন খেতে হলে খুব বুঝেশুনে খেতে হবে।
লবণ আমাদের জীবনের সাথে জড়িত একটি উপাদান। মানুষ বিভিন্ন খাবারে লবণ ব্যবহার করে থাকে।
লবণ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন।
ভূমিকাঃ
লবণের ইংরেজি নাম হলো Sodium Chloride। লবণের সংকেত হলো NaC। লবণ সমুদ্র অঞ্চলে চাষ করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন জাতের লবণ বাজারে পাওয়া যায় কোনটা চিকন আবার কোনটা মোটা। অতিরিক্ত লবণ খেলে ক্ষতি হয় কথাটি একদম মিথ্যা নয়। আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেয়ে থাকি তাহলে এটির কারণে আমাদের শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে।
এমন ভাবে জড়িত যে আমরা যে কোন খাবার রান্না করতে চাইলে লবণ ব্যবহার করতে হয়। লবণ ছাড়া বর্তমানে কোন খাবার সুস্বাদু হয় না। লবণ খাবার খেয়ে অতি সুস্বাদু করে তোলে যার ফলে আমরা খাবারে তৃপ্তি অনুভব করে থাকি। লবণ খাওয়া একবারে বাদ দেওয়া অসম্ভব কিন্তু লবণ খাওয়া কমায় দেওয়া অসম্ভব না। লবণ দেখতে সাদা হয় আবার কিছুটা কালো হয়ে থাকে। সাধারণত ফিল্টার করা লবনগুলো ধবধবে সাদা রঙের হয়ে থাকে।
লবণ খাওয়ার উপকারিতাঃ
লবণ খাওয়ার মাধ্যমে আমরা খাবারের টেস্ট পেয়ে থাকি। লবণ প্রত্যেকটি খাবারে সাথে ব্যবহার করা যায়। লবণ দিয়ে খাবার খেলে আমরা খাবারে তৃপ্তি পেয়ে থাকি। তবে জেনে রাখা ভালো যে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত লবণ খেলে ক্ষতি হয় আবার কম লবণ খেলেও ক্ষতি হয়। তাই আমদের কে কম পরিমানের লবণ খেতে হবে। লবণ খাওয়া ক্ষতি হয়ে থাকলেও লবণ খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো-
- হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা খুবই ক্ষতিকর আমাদের শরীরের জন্য। এটি মূলত শরীরে আয়োডিনের অভাবে হয়ে থাকে। আমরা কমবেশি অনেকেই জানি লবণ শরীরের আয়োডিনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে। আয়োডিন একা একা তৈরি হতে পারে না এটি মূলত লবণের দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে। তাই আমাদেরকে প্রতিদিন কম হলেও বিভিন্ন খাবারের সাথে লবণ খাওয়া উচিত।
- লবন এমন একটি খাদ্য যা না খেলে কোন খাবারের স্বাদ আসে না। মাংস থেকে শুরু করে সবজি মাছ সকল খাবারে লবন ব্যবহার করতে হয়। লবণ খাবারে স্বাদ বৃদ্ধিতে আমাদের উপকার করে থাকে।
- লবণ আমাদের শরীরের হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে,এটি হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের উৎপাদনে সহায়ক হিসেবে জানা যায়।
- লবণ খাওয়ার মাধ্যমে লবণ আমাদের শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি আমাদের শরীরের তরল এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
- লবণ খাওয়ার মাধ্যমে সাইনাসের সমস্যা দূর হয়ে থাকে পাশাপাশি শুকনো কাশি কমাতে লবণ এর ভুমিকা রয়েছে।
- আমরা যদি লবণ পানির গার্গল করি তাহলে এটির মাধ্যমে মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে থাকে।
- লবন খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীর এ লবণ স্নায়ু সংক্রমণ ও পেশীর কার্যকারিতায় ভালো ভুমিকা রাখে।
- লবণ খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী নারী সুস্থ থাকে এর সাথে সাথে গর্ভে থাকা সন্তান সুস্থ ভাবে জন্ম নিতে পারে। গর্ভবতী সময় বেশি লবণ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া থাকে।
লবণের যত ব্যবহারঃ
- দাঁত ঝকঝকে ও সাদা করতে লবণ ব্যবহার করা হয়। আমরা যদি পরিবহন মত্ত বেকিং সোডার সাথে এক চামচ লবণ মিশিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা মিন্ট তেল এবং এর সাথে এক চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে দাঁত ব্রাশ করি তাহলে আমাদের দাঁত সাদা হবে এবং ঝকঝকে হয়ে উঠবে।
- আমরা অনেক সময় নাক বন্ধ নিয়ে সমস্যায় ভুগি। এ সময় যদি আমরা লবণ পানিতে মিশিয়ে এটা অপারে সাহায্যে আমাদের নাকে প্রবেশ করাই তাহলে নাক বন্ধ খুব সহজে দূর হয়ে থাকবে।
- ত্বকের যত্নে লবণের ভূমিকা অনেক। আমরা যদি পরিমাণ মতো মধুর সাথে লবণ মিশিয়ে তা মুখে লাগাই এবং ঠিক 15 মিনিট পরে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলি তাহলে এর ফলে আমাদের ত্বকের ব্রণ কিংবা ত্বকের বিভিন্ন ইনফেকশন দূর হয়ে থাকবে। তবে এটি নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।
- আমরা যদি মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে ভুগি তাহলে লবণ দিয়েও মাউথ ওয়াশ তৈরি করা যায়। আমরা যদি পরিমাণ মতো লবণ এবং পরিমাণ মতো মেন্থল তেল পানিতে মিশিয়ে তা দিয়ে প্রতিদিন গড়গড়া করি তাহলে এর ফলে আমাদের মুখের দুর্গন্ধ বের হয়ে যাবে।
- আমরা যদি ডিম সেদ্ধ করার সময় কিছু লবণ পানিতে মিশিয়ে দি তাহলে এর ফলে সিদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানো খুবই কম সময় লাগবে।
- আবার আমরা যদি দাঁতের হলদে ভাব দূর করতে চাই তাহলে বেকিং সোডার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ব্রাশ করতে হবে।
- আবার আমরা যদি আমাদের হাত থেকে পেয়াজ কিংবা রসুনের গন্ধ দূর করতে চাই তাহলে ভিনেগারের সাথে লবণ মিশিয়ে হাত হতো করতে হবে।
- আবার আমরা যদি রান্না বান্না দ্রুত করতে চাই তাহলে সবুজ শাকসবজি নিষিদ্ধ করার সময় পানিতে লবণ মিশিয়ে নিতে হবে এর ফলে রং নষ্ট হবে না এবং শাকসবজি দ্রুত সিদ্ধ হবে।
- আবার আমরা যদি কোন লোহার পাত্র পরিষ্কার করতে চাই তাহলে কিছু পরিমাণ লবণ ছিটিয়ে তা কাপড় দিয়ে ঘষে মুছে নিলে লোহা ভালো পরিষ্কার হয়ে থাকে।
- আবার আমরা যদি আমাদের বাসা বাড়িতে পিঁপড়ার উপাদক কমাতে চায় তাহলে যেখানে পিপড়ার আনাগোনা সেখানে লবণ ছড়ায় দিতে হবে। এর ফলে পিপড়ার জ্বালা থেকে মুক্ত পাওয়া যাবে।
- লবণ অনেকভাবে ব্যবহার করার যায় এর ফলে আমরা অনেক উপকারিত হয়ে থাকি তবে অতিরিক্ত লবণ খেলে ক্ষতি হয় এটি কিন্তু সত্য। আমাদের উচিত লবন পরিমাণ মতো খাওয়া।
অতিরিক্ত লবণ খেলে ক্ষতি হয়ঃ
- আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেয়ে থাকি তাহলে এটির ফলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি হতে থাকবে।
- যখন খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের পেটে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে থাকে পেটে ক্যান্সার।
- অতিত লবণ খেলে আবার আমাদের হাঁপানি সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাঁপানি এমন একটি রোগ যার ফলে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয় অর্থাৎ রোগী শ্বাস নিতে পারে না।
- আবার আমরা যদি খাবারে অতিরিক্ত লবণ খেয়ে থাকি তাহলে এটির কারণে আমাদের হৃদপিণ্ড এবং কিডনির সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। আর এটি এমন একটি সমস্যা যার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
- আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেয়ে থাকি তাহলে এটি আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বানিয়ে ফেলে। মানুষ বিভিন্নভাবে অসুস্থ হয়ে পরে।
- আমরা যদি অতিরিক্ত লবণ খায় তাহলে এটি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি বিষয় হতে পারে। মস্তিষ্কে যদি কোন ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে মানুষের স্মৃতি শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে লবণ আমাদের পানির পিপাসা অধিক মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে আমাদের ঘন ঘন পানি খেতে মন চায়। যার ফলে আমাদের পেট ফুলে যায় এবং ঘন ঘন প্রস্রাব পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যার কারণে এথেরোস্ক্লেরোসিস, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফুলে যায় যেমন হাত,পা। এটি হয়ে থাকে মূলত লবণ শরীরের পানি ধরে রাখে।
প্রতিদিন কতটুকু লবণ খাওয়া উচিতঃ
বর্তমানে আমরা লবণের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে রয়েছি যে প্রতিনিয়ত আমাদেরকে লবণ খেতে হয়। এটি মূলত আমরা অভ্যাসে পরিণত করেছি। আমরা প্রতিদিন যেগুলো খাবার খাই সেগুলো খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করতে লবণ ব্যবহার করতে হয়। লবণ ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা খাবারের তৃপ্তি পেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা খুব কম মানুষই জানি যে অতিরিক্ত লবণ খেলে ক্ষতি হয়।
আমাদের উচিত অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে নিজেদের কে বিরত রাখা। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রাম লবণ খাওয়া উত্তম। এর ফলে লবণ কম খাওয়া যাবে এবং ক্ষতিও কম হবে। তবে আমাদেরকে যত সম্ভব লবণ খাওয়ার অভ্যাস হতে দূরে থাকতে হবে। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন খাবারের সাথে লবণ যুক্ত না করা।
লবণ কত প্রকার ও কি কি??
গঠন অনুসারে লবণকে ছয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। পুরো পৃথিবীতে সমুদ্রের পানি দ্বারা লবণ তৈরি করা হয়। লবণের শ্রেণীবিভাগ গুলো নিচে দেওয়া হলো-
- পূর্ণ লবণ,
- অম্লীয় লবণ,
- ক্ষারকীয় লবণ,
- যুগ্ম লবণ,
- মিশ্র লবণ ও
- জটিল লবণ।
লেখকের শেষ কথাঃ
আমরা এতক্ষন লবণ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। লবণ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায় আবার লবণের উপকারিতা ও রয়েছে কিন্তু আমাদের অতিরিক্ত লবণ খেলে ক্ষতি হয়। তাই আমাদের উচিত অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে দূরে সরে আসার। এর ফলে আমরা বেশি সুস্থ থাকতে পারবো।
পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে পাশে থাকবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url