অতিরিক্ত শসা খেলে কি হয় বিস্তারিত জেনে নিন
আপনি কি অতিরিক্ত শসা খেলে কি হয়? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনি এখানে অতিরিক্ত শসা খেলে কি হয় বা শসা খাওয়ার নিয়ম কিংবা এর উপকারিতা এবং শসা দিয়ে ফেসিয়াল সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
শসা সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইল। আশা করি এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনি শসার বিষয় সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।
ভূমিকাঃ
শসা অতি পুষ্টি সম্পন্ন একটি সবজি। শসা ছোট থেকে বড় প্রায় সবাই অনেক পছন্দ করে। শসা মূলত মানুষ খাবারের সাথে সালাদ হিসেবে বেশি পছন্দ করে থাকে। সালাদ খাওয়ার মাধ্যমে যে কোন খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। সালাদ বর্তমানে বিভিন্ন নাস্তা খাবারের সাথে খাওয়া হয়। যেমন-সিঙ্গারা, আলুর চোপ, পুরি, হালিম, চটপটি, ফুচকা ইত্যাদি। আবার ত্বক ভালো রাখতে শসা দিয়ে ফেসিয়াল করা খুবই উপকারিতা অনেক।
শসা দেশ-বিদেশের সকল মানুষের কাছে অতি প্রিয় একটি খাবার। বর্তমানে শসার ফলন অনেক ভালো। শসা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের অনেক উপকার হয়ে থাকে কিন্তু অতিরিক্ত শসা আবার আমাদের জন্য বিপদ নিয়ে আসতে পারে। আমাদের উচিত আমাদের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণ মতো শসা খাওয়া।
শসা খাওয়ার নিয়মঃ
শসা অতি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি। শসা বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকে। খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে অনেক উপকার হয়ে থাকে। শসা খাওয়ার নিয়ম বলতে আমরা সকালে নাস্তার সাথে, দুপুরে খাবারের সাথে কিংবা রাতের খাবারের সাথে সালাদ হিসেবে খেতে পারি। সাধারণত মানুষ খাবারের সাথে শসা সালাদ হিসেবেই বেশি পছন্দ করে থাকে।
বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ফাস্টফুড আইটেমের সাথে শসার সালাদ খাওয়া হয়। শসার সালাদ তৈরি করা হয় মূলত প্রথমে শসা ভালোভাবে ধুয়ে তা ছিলে নিয়ে চাকচাক করে কেটে কিংবা কুচি কুচি করে কেটে তা মরিচ লবণ দিয়ে মেখে সালাদ তৈরি করা হয়। শসা দিয়ে কিন্তু আবার শসার জুসও বানানো যায়।
যারা ওজন কমাতে চায় তাদের জন্য শসার রস বা শসার জুস খুবই উপকারী হয়ে থাকে। শসা দিয়ে কিন্তু আবার অনেক ধরনের তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়।যেমন-মাছ এর তরকারি,ডিম এর তরকারি ইত্যাদি। শশা দিয়ে ফেসিয়াল করেও কিন্তু অনেক উপকার পাওয়া যায়।
শসা খাওয়ার উপকারিতাঃ
শসা এমন একটি সবজি যা খেলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হয়ে থাকে। শসা দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত একটি সবজি। কারণ বেশিরভাগ মানুষই খাবারের সাথে শসার সালাদ খেয়ে থাকে। শসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো-
- আমাদের দেহের মধ্যে অনেক বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা আমাদের শরীরে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু শসা খাওয়ার মাধ্যমে শসায় থাকা পানি এসব বিষাক্ত পদার্থ আমাদের দেহ থেকে দূর করতে পারে।
- এমন অনেক মানুষ হয়েছে যারা কিডনিতে পাথর সমস্যা নিয়ে ভুগেন। এক্ষেত্রে শসা হতে পারে একটি উত্তম মাধ্যম কারণ শসা খাওয়ার মাধ্যমে কিডনিতে সৃষ্টি হওয়া পাথরগুলো গলে যায় এবং মানুষকে সুস্থ করতে ভূমিকা রাখে।
- শসাতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের ভিটামিনের অভাব পূরণ করে।
- নিয়মিত শসা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যে কোন ক্ষতস্থান খুবই দ্রুত ভালো হতে শুরু করে।
- নিয়মিত শসাখার মাধ্যমে আমাদের দেহের পারমিশূন্যতার অভাব দূর করে থাকে কারণ শসায় রয়েছে প্রায় ৯৫ শতাংশই পানি।
- শসায় থাকা পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও সিলিকন আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করতে কিংবা ভালো রাখতে সাহায্য করে। শসা দিয়ে ফেসিয়াল খুব ভালো হয়ে থাকে এটি দ্বারা ত্বক সুন্দর হতে থাকে।
- আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা কোষ্ঠ-কাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন। সেসব মানুষ যদি নিয়মিত শসা খেয়ে থাকে তাহলে তাদের কোষ্ঠ-কাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- নিয়মিত শসা খাওয়ার মাধ্যমে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি হয়। যারা চোখের দৃষ্টি শক্তির সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত নিয়মিত শসা খাওয়া। সশা চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধিতে খুবই ভালো একটি উদাহরণ।
- নিয়মিত শসা খাওয়ার মাধ্যমে শসা মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এক কথায় নিয়মিত শসা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
- বর্তমানে প্রায় মানুষই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত কিন্তু সেসব মানুষ যদি নিয়মিত শসা খায় তাহলে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কারণ শসা খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- নিয়মিত শসা খাওয়ার মাধ্যমে চুল মজবুত হয় এবং হাতের নখ সতেজ থাকে।
- আমরা প্রায় সময় মাথাব্যথা কিংবা মাথা ধরা সমস্যা নিয়ে ভুগি তবে শসা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা কিন্তু এই সমস্যা হতে মুক্তি পেতে পারি। সাধারণত অনেক কাজের চাপ থাকলে মাথাব্যথা শুরু হয় কিংবা অতি রোদের মধ্যে থাকলে কিংবা ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ঘোরা শুরু হয়। আসলে এই সময় আমাদের উচিত শসা খেয়ে নেওয়া। কারণ এর ফলে মাথা ধরা দূর হবে।
অতিরিক্ত শসা খেলে কি হয়ঃ
শসা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার করে থাকলেও শসা অতিরিক্ত ফেলে আমাদের অনেক ক্ষতিও হতে পারে। শসা আমাদের উপকার করে থাকে বলে যে আমাদের কে অতিরিক্ত শাসা খেতে হবে তা কিন্তু নয়। অতিরিক্ত শসা খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তা নিজেই বিস্তারিত দেওয়া হলো-
- ওজন কমাতে যদি সারাক্ষণ শসা খাওয়া হয় তাহলে ঘটবে নানা বিপত্তি। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে যাবে, কাজ করার শক্তি থাকবে না এবং রক্ত কমে যাওয়ার আশংকা থাকবে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খাওয়ার ফলে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে তাই অতিরিক্ত শসা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
- বেশি পরিমাণে শসা খাওয়ার ফলে আবার বদহজমসহ,পেট ব্যথা কিংবা পেট ফাঁপার সমস্যাও হতে পারে।
- অতিরিক্ত শসা খাওয়ার হলে যেসব মানুষের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের শরীরে এলার্জি দেখা যায়। এর ফলে ত্বক লাগছে কিংবা চোখে চুলকানি সহ শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এবং মাথা ঘোরা পর্যন্ত হতে পারে।
- অতিরিক্ত শসা খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী মাতৃতে সমস্যা হতে পারে। এর ফলে মিসকেরিজ পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত শসা খাওয়ার মাধ্যমে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো হতে পারে না।
- যদি কখনো রাতের বেলা অতিরিক্ত ঠান্ডা শসা খাওয়া হয় তাহলে এর ফলে সর্দি কাশি অসুখ-বিসুখ এর সৃষ্টি হতে পারে।
- শসা খাওয়ার সময় শসায় ৯৫% পরিমাণ পানি থাকে। তাছাড়াও শসায় রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, কপার, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়। এগুলো আমাদের শরীর এর উপকার করে থাকলেও সঠিক পরিমাণে শসা না খেলে শসার কারনে আমাদের ক্ষতির সীমা থাকবে না।
শসা খেলে কি ওজন বাড়ে?
- শসা খেলে পেটের মেদ কমে যেতে পারে, কিন্তু ওজন বাড়ে না। শসা একটি স্বাস্থ্যকর সবজি, যেখানে ফ্যাট, চর্বি, ক্যালোরি, এবং কার্বোহাইড্রেট এর পরিমান কম থাকে। এটি শরীর এর মেদ বৃদ্ধি করতে বাধা দিয়ে থাকে।
- দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের সাথে বেশি করে শসা খাওয়া উচিত। এতে পেট তো ভরে আবার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে থাকে। সঠিক খাবার সাথে যদি শসা খাওয়া হয় তাহলে অনেক সাস্থ উপাদান পাওয়া যায়।
- শসার স্লাইস করা সবচেয়ে ভাল। শসার সঙ্গে যদি আমরা টকদই মিশিয়ে খাই তাহলে ভালো কাজ করবে। টক দইয়ের সাথে শসা মিশিয়ে স্যুপ বানিয়ে খেতে পারলে শরীর এর মেদ কমাতে ভালো ভুমিকা রাখবে।
- ওজন কমাতে যেয়ে আবার দিনে অফুরন্ত শসা খাওয়া যাবে না। দিনে ২-৩টা শসা খেলেই শরীর এর ওজন কমাতে কাজ করবে।
- শসা যদি একটি মানুষ সঠিক ভাবে খায় তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে ওজন কমতে শুরু হবে কারন শসা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- শসা যে শুধু ওজন কমাতে সাহায্য করবে টা নয় শসা দিয়ে ফেসিয়াল অনেক ভালো হয় নিচের পয়েন্ট এ দেখুন।
শসা দিয়ে ফেসিয়ালঃ
- ফেসিয়াল একটি বিউটি ট্রেন্ড যা ত্বকের ময়েশ্চার লক করে ইনস্ট্যান্টলি ফ্রেশনেস ও ফ্রেস লুক নিয়ে আসে যা একটি সুন্দর চেহারা আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। শসা দিয়ে ফেসিয়াল করলে স্কিনের বাহির থেকে সব ধুলো-ময়লা পরিষ্কার হয়েো ফ্রেস লুক এনে দিবে।
- আমরা যদি পরিমাণমত টক দইয়ের সাথে পরিমাণমত ওটস এর সাথে শসার পেস্ট মিশিয়ে তাতে আবার পুদিনার কুচি মিশিয়ে নি। এরপর এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে টা ৩০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে নি। এতে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পাবে।
- আবার শুধু শসার রস মুখে লাগিয়ে তা ১৫ মিনিট পর যদি ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলি তাহলে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
- আমরা যদি শসা দিয়ে নিয়মিত ফেসিয়াল করি তাহলে আমাদের ত্বকে তুলে তো ভাব এবং ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে থাকবে।
- আপার আমরা যদি শসা এবং অ্যালোভেরা জেল ভালোভাবে ব্লেন্ডারে ইনস্টল করতে পারি তাহলে তা দিয়ে মুখ ফেসিয়াল করে কমপক্ষে 15 মিনিট রেখে পানি দিয়ে মুখ ধুত করে নিতে হবে এর ফলে স্কিন ভালো থাকবে।
- অনেক সময় বিভিন্ন কারণে ত্বককে জ্বালাপোড়া শুরু করে। এই সময় যদি আমরা শসার রস দিয়ে ফেসিয়াল করি তাহলে ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যাবে আবার এর সাথে সাথে স্ক্রিনও ভালো থাকবে।
লেখকের শেষ কথাঃ
শসা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী একটি খাবার কিন্তু তাই বলে যে আমাদের কে অতিরিক্ত শসা খেতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। যে জিনিস আমাদের উপকার করতে পারে সে জিনিস কিন্তু আমাদের আবার ক্ষতিও করতে পারে। আমরা এতক্ষন শসা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। শসা শুধু আমাদের খাবার হিসেবেই পরিচিত না শসা দিয়ে ফেসিয়াল কিন্তু খুবই পরিচিত।
আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে পাশে থাকবেন। আপনাদের সাপোর্ট আমাকে অনুপ্রেরিত করবে আপনাদের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরার।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url