পালস রেট পরিমাপ করবো যেভাবে বিস্তারিত জেনে নিন।
আপনি কি পালস পরিমাপ করব কিভাবে তা বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি পাল্ট পরিমাপ করার নিয়ম এর পাশাপাশি আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন।
পালস রেট বলতে যা বুঝিঃ
হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করলে বাড়িতে অনেক সময় আমরা হার্টবিট ঠিক আছে কিনা, তা লক্ষ্য করার চেষ্টা করে থাকি। মানব দেহের হৃদপিণ্ড একটি স্বয়ংক্রিয় পাম্পের মত দেহাভ্যন্তরে সারাক্ষণ সংকোচ-প্রসারণের মাধ্যমে স্পন্দিত হয়, যা পালস নামে পরিচিত।
অর্থাৎ কারো পালস দেখা বলতে তার হার্ট বিটের রেট অনুভব করাকে বুঝায়।সুস্থ মানুষের প্রতি মিনিটে ৬০-৯০ বা ৬০-১০০ বার হার্টবিট হয়। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের পালস রেট বেশি থাকে। আবার বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের আরো বেশি হয়।
বিভিন্ন পালসের নাম সমুহঃ
কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে সহজেই পালস রেট মাপা যায়। স্থানের নাম অনুযায়ী ওই পালসের নামকরণ করা হয়। যেমন-
- রেডিয়াল পালস:
- বেজ অফ থাম্ব(base of thumb) হাত বৃদ্ধাঙ্গুলির গড়ায় এটি পাওয়া যায়।
- টেম্পলাল পালস:
- সাইড অব ফোর হেড(side of forehead) অর্থাৎ কপালের দুই পাশে এটি পাওয়া যায়।
- ক্যারোটিড পালস:
- সাইড অব নেক(side of neck) অর্থাৎ ঘাড়ের দুই পাশে এটি পাওয়া যায়।
- ব্রাকিয়াল পালস:
- ইনার অ্যাস্পেক্ট অব এলবো (inner aspect of elbow)অর্থাৎ,দুই কনুইয়েরই ভেতরে দুই পাশে এটি পাওয়া যায়।
পালস রেট পরিমাপ করব যেভাবেঃ
উল্লেখিত স্থান গুলোর যে কোনটিতে নির্দিষ্ট কৌশলে স্পর্শের সাহায্যে পালস রেট পরিমাপ করা যায়। তবে আমরা সাধারণত রেডিয়াল পালস রেটোই বেশি পরিমাপ করে থাকে। নিচে রেডিয়াল পালস পরিমাপ করার ধারাবাহিক পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো-
- শুরুতেই রোগীকে একটি আরামদায়ক অবস্থানে রাখতে হবে।
- রেডিয়াল পালস পাওয়ার জন্য রোগীর কবজির হাড় এবং কবজির গড়ায় টেন্ডনের মধ্যে তিনটি আঙ্গুলের সাহায্যে আলতো চাপ ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে তর্জনী, মধ্যমা এবং তৃতীয় আঙ্গুলের ডগা ব্যবহার করতে হবে। রেডিয়াল পালস রোগীর উভয় কব্জিতে নেওয়া যেতে পারে।
- আঙ্গুলের ডগা ব্যবহার করে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যাতে প্রতিটি বিট অনুভব করা যায়. খুব জোরে চাপ দিলে রক্ত প্রবাহ বাধা গ্রস্থ হয়ে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে পালস ঠিকমতো পাওয়া যাবে না।
- এভাবে আলতো চাপ প্রয়োগ করে ঘড়ির দিকে লক্ষ্য রেখে এক মিনিট পর্যন্ত নারীর স্পন্দন গণনা করতে হবে, এই এক মিনিটে প্রাপ্ত ফলাফলেই হচ্ছে পালস রেট। প্রয়োজনে প্রাপ্ত রেট রেকর্ড রাখতে হবে।
অক্সিমিটার যন্ত্রের কাজঃ
কোভিডের সময় আমরা অনেকেই একটা বিশেষ যন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল; সেটি হলো অক্সিমিটার। পালস অক্সিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজেই পালস রেটের পাশাপাশি অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপা যায়। রক্তে অক্সিজেনের শতকরা মাত্রাকেই মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় অক্সিজেন স্যাচুরেশন।একজন সুস্থ ব্যক্তির রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা থাকা উচিত ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ।
অক্সিজেন ৯০ শতাংশের নিচে নেমে গেলেই সমস্যা শুরু হয়। মাত্রা বেশি কমে গেলে রোগীকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়।পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে পালস ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপার জন্য রোগীর আঙ্গুলে চিত্রের মতো ডিজিটাল মেশিনটি তে লাগিয়ে দিতে হয়। তারপর সুইচ টিপে সেটি চালু করলে এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিসপ্লেতে পালস রেট ও অক্সিজেনের মাত্রা চলে আসে।
পালস রেট ও অক্সিজেন স্যাচুরেশনঃ
- পালস রেটঃ পালস রেট পরিমাপের ফলে আমরা সহজেই রোগীর হার্টবিট সম্পর্কে জানতে পারি। এর ফলে দ্রুত রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায়। একজন রোগীর পালস রেট চেক করা একজন ডাক্তার এর প্রধান কাজ।
- অক্সিজেন স্যাচুরেশনঃ অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপার ফলে আমরা রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস সম্পর্কে জানতে পারি।মানুষ বেঁচেই থাকে অক্সিজেনের মাধ্যমে নিশ্বাস নিয়ে।মানুষ যদি নিশ্বাস নিতে না পারে তাহলে মানুষ বাঁচতে পারবে না।অক্সিজেন স্যাচুরেশন এর জন্য খুব দ্রুত ও সহজে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস এর মাত্রা জেনে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা যায়।ফলে রোগী দ্রুত সুস্থ হতে পারে।
মতামতঃ
যে কোনো রকম শারীরিক পরিশ্রম করার পর পালস রেট বাড়তে পারে। এমনকী কাশির ওষুধ খেলেও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে পালস।।কিছু কিছু ওষুধ খেলে কিন্তু পালস রেট কমে যেতে পারে। তাই এমন অবস্থার সম্মুখীন হলে সবার প্রথমে নিজের প্রেসক্রিপশন নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। তাঁকে সমস্যার কথা বলুন,চিকিৎসকের পরামর্শ মতাবেক চলাফেরা করুন এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন। এই কাজগুলো করলেই হঠাৎ করে কোনো বিপদ ঘটার আশঙ্কা অনেকটাই কমবে।
পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে শেয়ার করুন এবং নিত্য নতুন বিষয় জানতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে পাশে থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url