টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি কি টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি ঠিক জায়গাতে এসেছেন। আমাদের এই পোষ্টটির মাধ্যমে আপনি টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ এর ভূমিকা,টমেটো খাওয়ার নিয়ম,প্রতিদিন একটা করে টমেটো খেলে কি হবে?টমেটো খেলে কি গ্যাস হয়? টমেটো দিয়ে ফেসিয়াল এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। টমেটো খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
টমেটোতে অনেক উপকার রয়েছে। টমেটো এমন এক সবজি যার মাধ্যমে মানুষ অনেক উপকৃত হয়ে থাকে। আমরা এই পুষ্টির মাধ্যমে আজ টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবো। নিচে বিস্তারিত পড়ুন।
ভুমিকাঃ
বিজ্ঞানের ভাষায় টমেটো একটি ফল হিসেবে প্রকাশ পেলেও পুরো পৃথিবীর মানুষ টমেটো কে সবজি হিসেবেই চিনে।তাই আমরা টমেটোকে সবজি হিসেবেই আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।টমেটো অতন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ এ ভিটামিন পাওয়া যায়। টমেটোতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ,ভিটামিন-সি,ফলিক এসিড,ক্রোমিয়াম সহ আরো অনেক পুষ্টিকর ভিটামিন পাওয়া যায়।
স্পেনীয় শব্দ (tomate) থেকে টমেটো নামকরন হয়।টমেটো গাছের উচ্চতা বেশি বড় হয় না।এটির উচ্চতা প্রায় ৩ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।টমেটো পুরো পৃথিবীতে পরিচিত একটি সবজি।ছোট থেকে বৃদ্ধ প্রায় সকলেই টমেটো বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকে।টমেটো বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় চাষ করা হয়।
টমেটো খাওয়ার বিভিন্ন উপায় থাকলেও টমেটোর 'সস' যেকোনো দেশের মানুষ এর কাছে খুবই পরিচিত একটি খাবার।টমেটো শীতল আবহাওয়ায় খুব ভাল হয় বলে টমেটো কে শীতের সবজি বলা হয়ে থাকে।টমেটো যে শুধু শীতকালেই জন্মায় তা নয়;গ্রিনহাউস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারা বছরই টমেটো চাষ করা যায়।এই জন্য সারাবছরই টমেটো চাষ হয় এবং মানুষ তা খেতে পারে।
টমেটোর বিজ মাটিতে লাগানর পর তা পরিচর্যার মাধ্যমে আসতে আসতে বড় হয়।তারপর একপর্যায় সময় হয়ে গেলে টমেটো গাছে ফুল ধরে।আর এই ফুল থেকেই আসতে আসতে টমেটো বড় হয়।কাচা অবস্থায় টমেটো সবুজ আবরণ এ থাকে কিন্তু তা ধিরে ধিরে লাল রঙ এ পরিবর্তন হয়ে যায়।
টমেটো খাওয়ার নিয়ম:
টমেটো বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন উপায়ে খেয়ে থাকে। টমেটো খাওয়ার সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হলো টমেটোর তরকারি। টমেটো এমন একটি সবজি যা বিভিন্ন উপায়ে রান্না করা যায় এবং নানারকম তরকারি রান্নাতে টমেটো ব্যবহার করা যায়।যেমন মাছ এর ঝোল এ টমেটো,মাংসের তরকারিতে টমেটো,বিভিন্ন ভাজি রান্নাতে টমেটো,কিংবা মাছ আর টমেটোর পুরপুরি।
টমেটোর সস আবার যেকোন ফাস্ট ফুড আইটেম এর সাথে খাওয়া যায়। যারা ফাস্ট ফুড খেতে বেশি ভালবাসে তারা টমেটোর সস বেশি ব্যবহার করে খাবার এর স্বাদ বাড়ানোর জন্য। টমেটো দিয়ে আবার অনেকে স্যুপ বানিয়ে থাকে যা বর্তমান এ অনেক চর্চায় রয়েছে।অনেক রেস্তরায় বা ফাস্ট ফুড দোকান গুলোতে টমেটো স্যুপ এর আইটেম রাখা হয়। টমেটো খাওয়ার উপকারিতা কিন্তু অনেক যা আমদের জন্য ভালো।
আবার ভুলে গেলে চলবে না যে টমেটো দিয়ে খুব সুন্দর আচারও তৈরি করা যায় যা খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। টমেটো আবার মুড়ি মাখানোর সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়।আমরা প্রায় মানুষ ভাত খাওয়ার সময় সালাদ খেয়ে থাকি।যেমন শসা,গাজর। কিন্তু টমেটো যে সালাদ এর জন্য খুবই ভাল একটি খাবার তা ভুলে গেলে চলবে না।এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা ভাত এর সাথে টমেটোর সালাদ খেয়ে থাকে।
প্রতিদিন একটা করে টমেটো খেলে কি হবে?
টমেটোতে এমন একটি পুষ্টিকর সবজ্জ যেখানে রয়েছে অনেক ভিটামিন।প্রতিদিন যদি আমরা একটা করে টমেটো খেয়ে থাকি তাহলে আমরা অনেক রোগ বালাই থেকে নিজেদের কে রক্ষা করতে পারবো।
টমেটোর প্রায় ৯৫ পার্সের্ন্ট পানি দ্বারা ভরপুর থাকে।আর বাকি ৫ পার্সের্ন্ট এর মধ্যে থাকে শর্করা ও আমিষ।আমিষ থাকে সুধুমাত্র ১ পার্সের্ন্ট।
আমরা জানি ভিটামিন এ রাতকানা রোগ দূর করে। যেহুতু টমেটোতে ভিটামিন এ রয়েছে সেহুতু প্রতিদিন ১টা করে টমেটো খেলে রাত কানা সমস্যা দূর হবে। তাছাড়াও টমেটো রক্তের সমস্যা,হার্টের অ্যাটাক,ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে ভাল ভুমিকা রাখে।
আমরা প্রতিদিন যদি একটি করেও টমেটো খেয়ে থাকি তাহলে টমেটোতে থাকা পুষ্টি আমাদের শরীর এর জন্য খুবই উপকৃত হবে। টমেটো শরীর সুস্থ রাখার জন্য ভাল একটি সবজি। বর্তমানে চিকিৎসকরা নিয়মিত টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাঃ
এখন আমরা জানবো টমেটো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
- আমাদের পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা চর্মরোগ এ আক্রান্ত থাকে।টমেটো এই চর্মরোগ দূর করতে সাহায্য করে।টমেটোতে থাকা পুষ্টি,ভিটামিন চর্মরোগ এর প্রতিশেধক হিসেবে কাজ করে।
- বর্তমান এ বাহিরে অনেক ধুলা বালি ও কলকারখানা বা যানবাহন এর কালো ধোঁয়া থাকার কারনে মানুষ এর ত্বক এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। টমেটো মানুষের সৌন্দর্য ধরে রাখতে ও বৃদ্ধি করতে ভুমিকা রাখে।এতে তাদের বয়স বেশি হলেও মনে হয় তারা তাদের যবন কালেই রয়েছে।
- এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা ষ্টক করার মাধ্যমে মৃত্যু বরন করে।টমেটো মানুষ দের কে ষ্টক এর ঝুকি হতে রক্ষা করার ভুমিকা রাখে।টমেটোতে থাকা উপাদান ষ্টক এর ঝুকি কমিয়ে দেয়।
- অ্যাজমা একটি মারাত্মক রোগ।অ্যাজমার কারনে মানুষ এর শ্বাস প্রশ্বাস এর সমস্যা হয়ে থাকে।টমেটো মানুষ দের অ্যাজমা হতে রক্ষা করার ভুমিকা রাখে।
- বর্তমানে ছোট বড় প্রায় অনেকরই ডায়াবেটিস ধরা পরে।ডায়াবেটিস এর কারনে মানুষ এর অনেক কিছুর খাওয়া দাওয়া বন্ধ করতে হয়।টমেটো মানুষদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভুমিকা পালন করে।যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা যদি নিয়মিত টমেটো খায় তাহলে তাদের ডায়াবেটিস না হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- যাদের মাড়ি থেকে রক্ত বের হয় আসলে তাদের ভিটামিন সি এর অভাব থাকে।তাই তাদের কে বেশি করে টমেটো খাওয়া উচিৎ কারন টমেটোতে থাকা ভিটামিন সি মাড়ি থেকে রক্ত বের হওয়া নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
- যেসব মানুষ এর শরীরের হাড় দুর্বল তাদের হাড়কে মজবুত করতে টমেটো ব্যপক ভুমিকা রাখে।টমেটো সেইসব মানুষ দের শরীরের হাড় মজবুত করে।
- মানুষ এর শরীরে রোগ বালাই এর মধ্যে জ্বর হলো একটি রোগ।যারা জ্বর রোগে আক্রান্ত তাদের উচিৎ টমেটো খাওয়া কারন টমেটো জ্বর প্রতিরোধ করতে ভুমিকা রাখে।
- যাদের সর্দি কাশি হয় তারা যেন টমেটোর গরম স্যুপ বানিয়ে খায়।এতে সর্দি কাশি দ্রুত ছাড়তে কাজ করে।
- টমেটো মানুষ এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।যারা ঘন ঘন কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হয় তারা যেন নিয়মিত টমেটো খায়।
- টমেটো মানুষ এর হার্টের সমস্যা দূর করে থাকে।যারা হার্টের রোগে আক্রান্ত তারা যেন নিয়মিত টমেটো খায় এতে তাদের হার্টের সমস্যা অনেক টা কমে যাবে।
- যারা অতিরিক্ত মোটাপান এ ভুগছেন তাদের উচিৎ নিয়মিত টমেটো খাওয়া। টমেটো মানুষ এর মোটাপান কমাতে ভুমিকা রাখে।
- টমেটো মানুষ এর শরীররে রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রন করতে ভুমিকা রাখে।যাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ উথা-নামা করে তাদের উচিৎ টমেটো খাওয়া।
- আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন কিছু খেয়ে থাকি।অনেক সময় বেশি খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের হজম এর সমস্যা হয়।যাদের হজম এর সমস্যা তাদের জন্য টমেটো খাওয়া হতে পারে একটি ভাল উপায়।
এতক্ষন আমরা টমেটো খাওয়ার উপকারিতার সম্পর্কে জনালাম। এবার আমরা জানবো টমেটো খাওয়ার অপকারিতার সম্পর্কে।
টমেটো খাওয়ার অপকারিতাঃ
টমেটো যেমন উপকারিতায় ভরপুর তেমন উপকারিতার সাথে সাথে এর অপকারিতাও রয়েছে।তবে উপকারিতার দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় টমেটোর উপকারিতার তুলনায় অপকারিতা খুবই নগণ্য।
- অ্যালার্জি একটি ভয়াবহ রোগ।যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের উচিৎ টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকা। টমেটো তে যদি কারোর অ্যালার্জি থাকে তাহলে টমেটো খাওয়ার জন্য তার চুলাকানি, গাঁটে ব্যথা ও অ্যানাক্সিফেলিস এর মত সমস্যা হতে পারে।
- যাদের কিডনি সমস্যা বা কিডনির কোন রোগে সাফার করতেছে তাদের উচিৎ টমেটো খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা।বেশি টমেটো খেলে কিডনিতে পাথর হবে আসলে বিষয়টা এমন না বরং যাদের কিডনিতে পাথর আছে তাদের উচিৎ টমেটো খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
- যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যে সমস্যা আছে তাদের টমেটো খাওয়া যাবে না কারন বেশি টমেটো খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত মারাত্মক রোগ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃআনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
টমেটো খেলে কি গ্যাস হয়?
ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিড দ্বারা ভরপুর আমাদের প্রিয় সবজি টমেটো।টমেটোতে থাকা এসব এসিড পেটে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যার কারনে অনেক সময় বুকে প্রচণ্ড পরিমানে জ্বালাপড়া শুরু হয়।অতি মাত্রায় টমেটো খাওয়ার ফলে টমেটোতে থাকা ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক পেটে গ্যস এর সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।যাদের গ্যাস এর সমস্যা রয়েছে তাদের উচিৎ টমেটো খাওয়া থেকে নিজেদের কে বিরত রাখা।
টমেটো দিয়ে ফেসিয়ালঃ
বর্তমানে মানুষ ফেস এর যত্ন করার জন্য অনেক দামি দামি ফেসিয়াল ক্রিম কিনে মুখে লাগিয়ে থাকে। আবার এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা অনেক টাকা খরজ করে পার্লারে যায় ফেসিয়াল করতে।কিন্তু টমেটো দিয়েও যে ভাল ফেসিয়াল বানিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায় টা হয়ত খুব কম মানুষই জানি।টমেটোর খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি টমেটো ফেসিয়াল এর কজা ও করে থাকে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলঃ
- আমরা যদি টমেটো রসের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে তাতে পরিমাণ মত টকদই ব্যবহার করে মিশ্রণ করি তাহলে এটি ত্বকের জন্য হবে একটি ভাল অরগানিক ফেসপ্যাক।
- আবার আমরা যদি টমেটোর রস এর সাথে ১ চামচ মধু মিশ্রিত করে টা ভালভাবে মিশ্রন করে ত্বকে লাগাতে পারি তাহলে এটিও হয়ে যাবে ত্বকের জন্য একটি ভাল প্যাক।যদি আমরা এই প্যাকটি ৩/৪ সপ্তাহ ব্যবহার করি তাহলেই এই প্যাক এর উপকারিতা পেয়ে যাবো।
- আবার আমরা যদি টমেটোর রস এর সাথে দুধ-বাদাম ভাল করে মিশ্রণ করে মুখে লাগাই তাহলে এই প্যাকটি আমাদের ত্বকের পোড়া ভাব ছড়িয়ে ফেলতে ভাল ভুমিকা পালন করবে।
- অনেক সময় আমাদের ত্বকে তৈলাক্ত ভাব চলে আসে;তখন আমরা ভাবি কি করা যায়? যার কারনে আমরা পার্লারে অনেক টাকা খরজ করি ফেসিয়াল এর পিছেই। কিন্তু আমরা যদি কাঁচা টমেটোর রস মুখে দি তাহলে এই তৈলাক্ত ভাব দূর করা সম্ভব। ইত্যাদি।
শেষকথাঃ
টমেটো আমাদের দৈনন্দিন কাজে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয়। টমেটো এমন একটি সবজি যা আমাদের আমিষ থেকে শুরু করে রোগ বালাই প্রতিরোধ এবং শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।টমেটো বিভিন্ন ভাবে মানুষ এর উপকার করে আসতেছে।টমেটো এমন একটি খাবার যা বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন উপায়ে খেয়ে থাকে।
আমরা এই পোস্টতিতে টমেটোর ভুমিকা থেকে শুরু করে টমেটো খাওয়ার নিয়ম,টমেটোর উপকারিতা-অপকারিতা,টমেটো খেলে গ্যস হয় নাকি এবং টমেটো দিয়ে ফেসিয়াল সম্পর্কে জানতে পারলাম।টমেটো অন্যান্য সবজি থেকে অতি জনপ্রিয় একটি খাবার। বেশিরভাগ মানুষই টমেটো খাবারে আইটেমের মধ্যে রাখে। টমেটো উপকারিতা তুলনামূলক অনেক বেশি।
যদি এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিউ করে পাশে থাকবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url